আজকের নির্বাচিত গল্প । পাঠকের কণ্ঠ । ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

গল্পঃ রাজপুত্রের প্রতিশোধ

লেখকঃ মনির হোসেন 

এক ছিলো এক রাজ্য, নাম সোনারপুর। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, অর্জুন, ছিলেন রাজ্যের গর্ব। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বীর, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, এবং সাহসী। কিন্তু তাঁর জীবন বদলে যায় এক ভয়ংকর রাতের ঘটনায়।

রাজ্যের দুশমন কালিন্দরাজা হঠাৎ এক রাতে সোনারপুর আক্রমণ করে। রাজা ও রানীকে হত্যা করে, রাজ্য দখল করে নেয়। অর্জুন তখন মাত্র পনেরো বছরের কিশোর। বিশ্বস্ত সেনাপতি বিক্রমের সাহায্যে তিনি গোপনে পালিয়ে যান।

বনের গভীরে আশ্রয় নিয়ে অর্জুন প্রতিজ্ঞা করলেন, একদিন তিনি তাঁর পিতামাতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবেন এবং রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন। তিনি বিক্রমের কাছে যুদ্ধ বিদ্যা, কূটনীতি, ও গোপন কৌশল রপ্ত করলেন।

পাঁচ বছর পর, অর্জুন যখন কুড়ি বছরের যুবক, তখন তিনি সোনারপুরের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা বিশ্বস্ত যোদ্ধাদের একত্রিত করেন। রাতের আঁধারে তারা একের পর এক শত্রুদের ঘাঁটি ধ্বংস করতে থাকেন।

একদিন অর্জুন জানতে পারেন, কালিন্দরাজা তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে রাজ্যের প্রধান দুর্গে অবস্থান করছে। অর্জুন তখন তাঁর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তিনি তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে রাত্রিকালীন আক্রমণের প্রস্তুতি নেন।

অর্জুন ও তাঁর সেনারা কালিন্দরাজ্যের বাহিনীকে ধোঁকা দিয়ে দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করেন। কালিন্দরাজাকে চমকে দিয়ে তিনি এক সম্মুখ যুদ্ধে নামেন।

কালিন্দরাজা অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করলেও বুঝতে পারে, এই তরুণের মধ্যে তার নিজের রাজ্যের ধ্বংসের আগুন জ্বলছে। অর্জুন নিজের শক্তি আর সাহস দিয়ে কালিন্দরাজাকে পরাজিত করেন এবং তাঁকে বন্দি করেন।

সোনারপুরে ফিরে এসে অর্জুন নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন। তিনি প্রজাদের মধ্যে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্য আবার আগের মতো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

এইভাবেই অর্জুন তাঁর পিতামাতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন এবং প্রমাণ করেন যে সাহস আর একাগ্রতা দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব।

-সমাপ্ত-

বাবা ছেলের জীবন- একটু ভিন্নরকম

এস এ বিপ্লব (অনুগল্প)
নারায়ণগঞ্জ

ছেলে :-ছেলের জম্মটা যেন সোনার চামচ মুখে নিয়ে।  জম্মতেই এতো আয়োজন কত মানুষ দেখতে এসেছে।সবাই খুশিতে হাসছে আর আনন্দে ভাসছে।ছেলে জম্ম থেকেই দেখেছে ছয় তলা বাড়ি, গাড়ি, বাবা_মা ,  দামিখাবার, দামি পোশাক  ইত্যাদি। কখনো বলতে হয় নি না চাইতেই সব পেয়েছে। অভাব কি আজও এই শব্দটির সাথে পরিচয় তার হয় নি। যেন স্বর্গে বসবাস করে। বাবা মা থাকা মানেই তো স্বর্গ। আর একের ভিতর সবই ছেলে পাচ্ছে। তাই ওর কাছে এটাই স্বর্গ।ছেলে চায় হেসে – খেলে জীবন টা যেন কেটে যায়। ছেলের দিন কাটে আনন্দ উল্লাসে,বন্ধু- বান্ধব নিয়ে। ছেলে জানে না বাস্তবতা কি?  বাস্তবতা কত কঠিন?  অভাব,দুঃখ,কষ্ট,বাস্তবতা এই শব্দ গুলির সাথে ছেলে এখনো পরিচিত হয়নি। তাই ছেলে সবার কাছে আনন্দে  বলতে পারে “আমার মত এতো সুখী নয়তো কারো জীবন”। ছেলের বন্ধুরাও আনন্দে অনেক সময় বলে থাকে তোর মত এতো সুখী নয় তো কারো জীবন! 

অন্যদিকে বাবা- ছেলের জীবন যেমন  তেমন আনন্দে যায় কেটে। কিন্তু বাবার জীবন  তো আনন্দে কাটে না,আনন্দের ছিল ও না।ছেলে জানে না বাবার আজকের এ পর্যন্ত আসতে কত ঝড় তুফান বয়ে গেছে জীবনে। ছেলে জানে  না বাবা কত রাত নির্ঘুম থেকেছে,  কতদিন পানি পান করে কেটেছে।কত রাত রাস্তায় কেটেছে। কত জুতা চাকুরীর জন্য ক্ষয় করেছে ।কত মানুষের গাল- মন্দ শুনতে হয়েছে।টাকার অভাবে মাযের চিকিৎসা করাতে পারেনি।আর পারেনি ছোট ভাই- বোনদের ভালো কোন চাকুরী তে যোগ দেওয়াতে।ছেলে জানে না বাবার আজকের এই ধনসম্পদ অর্জনে কত পরিশ্রম, ত্যাগ আর কত চোখের জল বয়ে গেছে। বাবা এখন গাড়ি তে চড়ে ঠিকই কিন্তু আনন্দে না বরং বাধ্য হয়ে চড়তে হয়। বাবা আজ বড় বাড়িতে থাকে ঠিকই কিন্তু আনন্দে নেই।বরং আফসোস আর অনুসূচনা করে থাকে। বাবা কাঁদে আড়ালে।বাবা কাদেঁ বৃষ্টিতে। যেন কেউ না পারে সেই কান্না বুঝিতে। তাই বাবাও মনে মনে  বলে- ” আমার মত এতো সুখী নযতো কারো জীবন “তবে বাবার  এ বলার মাঝে থাকে আবেগের কষ্ট। থাকে আর্তনাদ, থাকে চিৎকার যা ছেলে জানে না।  বাবা এ কথা বলে অনেক কষ্টে ।
আসলে  কথা এমন এক বিষয় যে, একই কথায় কেউ রাগ করে আবার একই কথায় কাউকে ভালো লাগে।ঠিক তেমনি  বাবা – ছেলে একই কথা বলে ঠিকই।কিন্তু দুজনের কথার ভিতর, ধরন,রকম সব আলাদা।একজন বলে অনেক কষ্টে। আরেকজন বলে অনেক আনন্দে।এখানেও তাই ফুটে উঠেছে।  সত্যি বলতে কি, বাবা- ছেলের জীবন একটু ভিন্ন রকম হয়। এই সমাজেও তাই দেখা যায়। 

-সমাপ্ত –