হায়াতের এপিটাফ
সাবিহা সুলতানা
হায়াতের দিনগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে,ধীরে ধীরে আমরা মৃত্যুপুরীর দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলছি অজান্তেই।তবুও ব্যস্ততা যেন কভু ফুরায় না।কিছুটা হাসি,কিছুটা হতাশা,কিছুটা আফসোস আর একরাশ দুঃখ নিয়ে জীবন দিব্যি চলছে।তবুও এক ক্লান্তি লগ্ন বিকেলে কানের স্ব নিকটে অসহায়ত্বের বেল বাজে।আমি তখন গাঢ় হতাশার শ্বাস ফেলি, ঠিক যেমনিভাবে
অতিথিপাখি নীড় খুঁজে না পেয়ে ক্লান্তিসুরে বড়গাছের মগডালে আশ্রয় নেয়।
ভোর সকালে ফিঙ্গে পাখিটা কি একনাগাড়ে সুর তুলে ক্লান্ত হয় না?কোকিল কি বসন্তের অপেক্ষায় বিরক্ত হয় না?তবে কেন বিতৃষ্ণা, ক্লান্তি বোধ আমার মনে ঠায় পায়? ভেবে পায় না!
প্রায়সই আমি নিশিরাতের গহীনে নিশাচরের সক্রিয়তায় বিমূঢ় হয়ে অবাকের রেশ কাটাতে ভুলে যায়;এ যেন স্রষ্টার প্রেমে পরার নব উদ্দীপনা। তবুও নফস কিভাবে অলীক মরিচীকায় হন্য হয়ে বেড়ায়?প্রশ্নের বোধহয় উত্তর হয় না!
শেষবিকেলে আমি এক বিমূর্ত সন্ধ্যার আভাস পাই।দিগন্ত শফকের লালিমায় যখন আমি উষ্ণতা খুঁজে পাই তখন আমি আনমনে বলে ওঠি,
"জীবনদীপ্তি এক সুরেলা ভায়োলিনের নাম"।
বিবর্ণ জীবনে প্রায়সই হোঁচট খায়,কারও অলীক কথার প্রভাবে পেঁজা তুলোর মতো গা ভাসায়, আফসোস নিংড়ানোর মতো সাহস পায় না। ভেতরের অন্তঃস্থিত থেকে হতাশা-মিশ্রিত শ্বাস যেন চুপেচুপে বলে ওঠে,
" সব অলীক,সব মিথ্যা
বাকিটুকু হিংসুকের নিখুঁত মেলা"।
চলার পথে অভিনয় ছাড়া যেন ঠিক জমে না ;নয়তো কেন এতো ছিনিমিনি আয়োজন? কেউ ভালো সাজতে টক-মিষ্ট মিশ্রিত কথা গুছাতে ব্যস্ত আবার কেউবা অন্যায় করে গা ঢাকতে ব্যস্ত।পরক্ষণেই আমার ঠোঁটযুগল বিরবিরিয়ে নেড়ে ওঠে,
"আমি বহুবার দুমরে মুচরে যায় অগ্রীভার ছলনায়,
অবাকের রেশ সহ তখন আমি বিমূঢ় হয়ে ভাবি,
মনুষ্যজাতি কি অভিনয়ে উচ্চশিক্ষিত হয়েছে?
সহসাই সূর্যের আলোকরশ্মির ন্যায় মনে উদিত হয়-
দুঃখ লুকিয়ে দিব্যি চলতে তো বেশ পারি,
তবে কি আমিও অভিনয়ী মানবী?
উদাসীন চিলের উড়ে যাওয়া খোলা আকাশের নিচেই হাজারও মানব মানবীর বসবাস।জীবন পথচলাই সুখ-দুঃখ, অভিমান-অভিযোগ,আশা-হতাশা,আফসোস-ভরসা,যুদ্ধ-কৌশলের যেন ফেরে ফেরে দেখা মিলে;যেন এরাই খুচরো পাথেয়ের অধিকারী মুসাফিরের সফরসঙ্গী।
হুম,, এটাই হায়াতের এপিটাফ!